Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
বাংলার কাবাটি খেলা
বিস্তারিত

একটা সময়ে গ্রাম বাংলার প্রধান খেলাইতো ছিল হা-ডু-ডু বা কাবাটি।  গ্রাম-বাংলায় একসময় খেলাটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়। এটিই বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। কিন্তু আধুনিককালের ফুটবল ক্রিকেটের রাজত্বির যুগে কাবাটি খেলা বলতে গেলে হারিয়েই গেছে। অথচ, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ‘কাবাটি বা হাডুডু ফেডারশন’ নামে একটি সংগঠন এক সময় ছিল, এখন আছে কি-না কে জানে! থাকলে তারা কি কাজ করছে তাও অজানা। কাজটাজ করলেতো কিছু জানা যেত।

কাবাটি খেলোয়াড়দের গায়ে গতরে শক্তি থাকার সাথে সাথে অনেক কৌশলী হতে হতো। রেফারির বাঁশির সাথে সাথেই এক পাশের কোর্ট থেকে  ‘ডাক‘ নিয়ে অপর কোর্টে যেতে হতো। শুদ্ধ বাংলায় ডাকটা হচ্ছে ‘চল কাবাটি কাবাটি কাবাটি কাবাটি....’ বা ‘ হাডুডু হাডুডু হাডুডু.....’। আর সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চল দিগ দিগ দিগ দিগ.....’। ডাক নিয়ে গিয়ে প্রতিদ্বন্দি কোন খেলোয়াড়কে ছুঁয়ে নিজ কোর্টে ফিরতে হতো। ফিরলে সফল আর অপর দলের খেলোয়াড়রা প্রস্তুত থাকতো, আগন্তুককে এমন ভাবে সামলাতে হবে যাতে তিনি নিজ কোর্টে ফিরতে না পারেন। ধরে ফেললে সবাই হামলে পড়ে সামলে নিতেন প্রতিদ্বন্দি খেলোয়াড়কে।

কাবাটি খেলার জন্য আদর্শ সময় বিকেল। আসরের পর থেকে শুরু করে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত। গ্রামের হাঁট বা রাস্তার ধারে মাঠ ঠিক করে খেলোয়াড়রা নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হতেন। তারপর হাল্কা গা-গরম পর্ব শেষে শুরু হতো খেলা। মুহুর্মুহু করতালি আর হইহুল্লোড়ে জমে উঠতো গোটা এলাকা।

প্রতিযোগিতা মূলক আয়োজন হতো বিভিন্ন এলাকায়। সেসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দলের হাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরস্কার হিসাবে দেয়া হতো স্যান্ডো গেঞ্জি ও বিজিতদের হাতে রুমাল। অবশ্য, গোসল এবং কাপড় ধোয়ার সাবান ও থাকতো পুরস্কারের তালিকায়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ও খেলাটি অন্তর্ভূক্ত থাকতো।

কাবাটির সেই সুদিন এখন আর নেই। বলতেগেলে হারিয়ে যেতেই বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাংলার জাতীয় খেলা। কাবাটি ফেডারশন থাকলেও সম্ভবতঃ তা এখন কেবল নামমাত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে তাদের কোন কাজকর্ম দৃষ্টি গোচর হচ্ছেনা। অথচ অতি সহজেই কাবাটির সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খেলায় খেলাটি অন্তভূক্ত করা যেতে পারলে ফলাফল হবে খুবই ইতিবাচক। পাড়া মহল্লার ক্লাবগুলোতে কাবাটি আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় বিত্তশালীদের। তাহলেই এক সময় ফিরে আসবে জাতীয় খেলার সুদিন। পাশাপাশি সরকারকে ও বিশেষ উদ্যোগি হতে হবে।

কিন্তু একটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরী। সেটা হচ্ছে, খেলাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য অসতর্কতায় রক্তারক্তি কান্ড ঘটতে পারে। ভাঙ্গতে পারে হাত ও পা।

তবে খেলাধুলায় কিছুটা ঝুঁকি সব সময় থাকেই। সব খেলায়। কিন্তু সতর্ক ব্যবস্থাপনা ও খেলোয়াড়দের অহিংসামূলক মনোভাবে তা এড়ানো যায়। কাবাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

আজকাল কোথাও কাবাটি আয়োজনের খবর পাওয়াই যায়না। সরকার এবং কাবাটি প্রেমীদের উদ্যোগে আবার এর সুদিন ফিরে আসবে বলেই আশাকরেন ক্রীড়া প্রেমীরা।